ঢাকা,বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

চকরিয়ার তৃতীয় ধাপের নির্বাচন ২৮ নভেম্বর

নৌকা ঠেকাতে সাত ইউনিয়নে বিদ্রোহ, সুবিধায় বিএনপি-জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আগামী ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইউনিয়নগুলোতে আওয়ামী লীগ তথা নৌকা প্রতীকের একক প্রার্থী দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এর পরও বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে সরব প্রচারণায় রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এতে নির্বাচনের ফলাফল বিএনপি-জামায়াতের ঘরে চলে যেতে পারে আশঙ্কা করছেন দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সচেতন মহল।

অবশ্য সম্প্রতি বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে এবং প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করলে চুড়ান্ত বহিষ্কার করা হবে মর্মে জেলা আওয়ামী লীগ একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিলেও তা আমলে নিচ্ছে না বিদ্রোহীরা। উপরন্তু দলের প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বীরদর্পে নির্বাচনী মাঠ গরম করে রেখে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কটূক্তি করতেও দ্বিধা করছেন না তারা।

দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ইউনিয়নে ইউনিয়নে যেসব বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন, তারা মূলত কেন্দ্রীয়, জেলা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার কাছের লোক। তাই দল থেকে সাময়িক বহিস্কারের বিষয়টি তারা কোন পাত্তাই দিচ্ছেন না।

পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা অভিযোগ করেন, তাঁর বিজয় ঠেকাতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সদস্য ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রবিউল এহেছান লিটন। বাকী ইউনিয়নগুলোর বিদ্রোহীদের আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলেও আমার ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী রবিউল এহেছান লিটন এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে।

সিরাজুল ইসলাম আরো অভিযোগ করেন, জেলা যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনকল্পে সম্প্রতি কেন্দ্রে প্রেরিত প্রস্তাবিত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদকীয় পদে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী রবিউলের নাম রাখা হয়েছে। জেলা যুবলীগ তার প্রতি একেবারে নমনীয় ভাব দেখাচ্ছে। এমনকি যুবলীগের অনেক নেতাকর্মী বিদ্রোহী প্রার্থী রবিউলের পক্ষে মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এসব বিষয় কেন্দ্রীয় যুবলীগের কাছে লিখিতভাবে অবহিত করেছি।

কাকারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. শওকত ওসমান অভিযোগ করেছেন, মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রের কাছে করা আবেদনে সাহাব উদ্দিন অঙ্গিকার করেছেন, নৌকা না পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন না। এর পরও দলের নেত্রীর সিদ্ধান্ত অমান্য করে নৌকা ডুবাতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সাহাব উদ্দিন। বিএনপি-জামায়াতের সাথে আঁতাত করে নৌকার বিজয় ঠেকাতে তৎপর রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী সাহাব উদ্দিন।

একইভাবে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন লক্ষ্যারচর ইউনিয়নে সহ-সভাপতি সাইকুল ইসলাম, কৈয়ারবিল ইউনিয়নে সদস্য আফজালুর রহমান চৌধুরী, কোনাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দিদারুল হক সিকদার, পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়ন কৃষকলীগ সভাপতি কামরুজ্জামান সোহেল, বদরখালী ইউনিয়নে মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী।

এসব বিদ্রোহী প্রার্থীর বক্তব্য, দলের প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে সবকিছুই যাচাই করা হয়নি। জনসমর্থন নেই এমন প্রাথীকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে। তাই তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এক্ষেত্রে দল থেকে চিরদিনের জন্য বহিস্কার করা হলেও তাতে কিছুই যায় আসে না তাদের।

সম্প্রতি কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচনী মাঠে যেসব বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে তাদেরকে স্থায়ীভাবে দল থেকে বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্রীয় দপ্তরে সুপারিশ করা হবে। এছাড়া যেসব নেতাকর্মী দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে কাজ করবে না তাদেরকেও দল থেকে বহিস্কার করা হবে।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ জাফর আলম বলেন, ‘যারা দলের নেত্রীর সিদ্ধান্ত অমান্য করে নৌকা ঠেকাতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

পাঠকের মতামত: